রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নতুন ভাবনা
জাতীয় ডেস্কঃ
গত চার বছরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক ফোরামে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক দেশের কাছেও ধর্ণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবে বলে আশ্বাস দিলেও নানা চতুরতার আশ্রয় নিয়ে একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নেয়নি। ইতোমধ্যে দেশটিতে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সীমান্তে আসতে শুরু করে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এর ৪ বছর পুরো হয়েছে গতকাল বুধবার। ফলে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আবারো নতুন করে সামনে উঠে আসে।
নতুন এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কী করবে এ সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশ এই ইস্যুতে যতটা এগিয়েছিল, সেটা মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে থমকে গেছে।
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর জন্য আগামী মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইস্যুটি উত্থাপন করবে। তবে, তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে মিয়ানমারের সামরিক সরকার থেকে কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু এগিয়েছিলাম, সেটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে থমকে গেছে। তবে এর আগে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারের সময় আলোচনা বা চুক্তি হলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যে শুরু করা যায়নি সে প্রসঙ্গও তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি অবশ্য মনে করেন, প্রত্যাবাসন শুরু না হলেও তখন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার একটা দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দায়বদ্ধ ছিল। কিন্তু, মিয়ানমারের বর্তমান সেনা শাসিত সরকার যদিও অভ্যন্তরীণভাবে বলেছে যে, রোহিঙ্গা বা অন্যান্য সমস্যার সমাধানে তারা আগ্রহী। কিন্তু, কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে, সেজন্য দেশটির সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক লাইলুফার ইয়াসমিন বিবিসিকে বলেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর ভরসা করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। একটা ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, আমেরিকা এখন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। সেজন্য বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সক্রিয় হতে হবে।